You are currently viewing ভিপিএস হোস্টিং কি? ভিপিএস এর কাজ কি?

নতুন নতুন টেকনোলজি ইনভেনশন এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর এই যুগে নিজের একটি ওয়েবসাইট না থাকা একেবারেই অনুচিত। একটি ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আমরা ভার্চুয়ালি ওয়ার্কস্পেস থেকে শুরু করে কোটি টাকার বিজনেস পরিচালনা করতে পারি।

ওয়েবসাইটের ঊর্ধ্বগতির চাহিদার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়। কিন্তু ওয়েবসাইট তৈরি করার আগে আমাদের ডোমেইন এবং হোস্টিং নিয়ে চিন্তায় পরে যেতে হয়। কারণ মার্কেটে হাজার হাজার কোম্পানি বিভিন্নরকম অফার দিয়ে থাকে। এদের মধ্যে কোন হোস্টিং প্যাকেজ ভালো বা কেনা উচিত সে সম্পর্কে আমরা সিধান্ত নিতে পারি না। আমাদের আজকের লেখায় আমরা ভিপিএস হোস্টিং কি? তা নিয়ে আলোচনা করবো। পুরো লেখাটি একদম শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য পারফেক্ট হোস্টিং প্যাকেজ কিনতে পারবেন।  

ভিপিএস হোস্টিং কি?

ভিপিএস বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার যাকে Virtual Private Server বা VPS নামেও ডাকা হয় যা একটি পপুলার হোস্টিং সার্ভিস। ভিপিএস কি তা আসলে এর নামের মধ্যেই বিদ্যমান। এখানে ভার্চুয়াল সার্ভার হলো একটি ডেডিকেটেড ফিজিক্যাল সার্ভারে থাকা আরো স্বতন্ত্র ওএস সমৃদ্ধ ডেডিকেটেড সার্ভার। অর্থাৎ এটি অনেকটা শেয়ারর্ড হোস্টিং এর মতই একটি সার্ভারে অনেকগুলো ইউজার থাকে। কিন্তু শেয়ারর্ড হোস্টিং এ যেমন একটি সার্ভারে থাকা সবকিছু ভাগাভাগি করে ইউজ করা হয় সেখানে VPS এ বিষয়টা অন্যরকম। 

আমাদের বাসায় আমরা যেমন পার্সোনাল কম্পিউটার ইউজ করি ভিপিএস সার্ভারেও তেমনি আলাদা আলাদা পার্সোনাল কম্পিউটার সেটআপ করা হয়। আপনার পার্সোনাল কম্পিউটারে আপনি যেমন আলাদা স্টোরেজ, র‍্যাম, সিপিইউ সহ অন্যান্য রিসোর্স স্বতন্ত্র ভাবে ফুল অ্যাক্সেস সহ ইউজ করেন ভিপিএস ঠিক তেমনি। এখানে hypervisor নামক এমুলেটর সফটওয়্যার দ্বারা ভার্চুয়াল কম্পিউটার তৈরি করা হয়। ফুল SSH অ্যাক্সেস সহ উইন্ডোজ বা লিনাক্স ওএস ইন্সটল করে পার্সোনাল সার্ভার তৈরি করা হয়। 

ভিপিএস সার্ভার হলো শেয়ারর্ড এবং ডেডিকেটেড হোস্টিং এর মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকা হোস্টিং সার্ভিস। অর্থাৎ এটি শেয়ারর্ড হোস্টিং এর থেকে বেশি সুবিধাজনক ফিচার সমৃদ্ধ। অন্যদিকে ডেডিকেটেড হোস্টিং এর মত উচ্চ ফিচার সমৃদ্ধ না হলেও এর ফ্লেভার ঠিকই পাওয়া যায়। কারন ভিপিএস হোস্টিং এ ডেডিকেটেড আইপি দেওয়া হয়। 

মোটকথা ভিপিএস হলো একটি কম্পিউটারের ভেতরে আরো ভার্চুয়াল কম্পিউটার তৈরি করা। উক্ত ভার্চুয়াল কম্পিউটার গুলোয় ডেডিকেটেড ওএস, স্টোরেজ, র‍্যাম, সিপিইউ থাকে। এছাড়া পুরো সার্ভারের সুপার ইউজার অ্যাক্সেস আপনার কাছে থাকবে। যার কারণে আপনি আপনার VPS সার্ভারে ইচ্ছেমতো  কাস্টমাইজেশন থেকে শুরু করে সার্ভার রিবুট সহ সবকিছু করতে পারবেন। আপনি যে স্পেস কিনবেন সেখানে আপনার ইচ্ছেমতো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ হোস্ট করতে পারবেন। 

ভিপিএস এর কাজ কি?

ভিপিএস এর কাজ কি?

ভিপিএস এ আপনি আপনার ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ উভয়ই হোস্ট করতে পারবেন। সেগুলো নিজের ইচ্ছামতো মেইন্টেইন করতে পারবেন। তবে এগুলো ছাড়াও আরও কিছু কাজ আছে যেগুলো শেয়ার্ড হোস্টিং এ করা সম্ভব না কিন্তু VPS সার্ভারে করা যায়। 

যেমন আপনি আপনার ভিপিএস সার্ভারে কোন ওপেনসোর্স মিটিং স্ক্রিপ্ট সেটআপ করে কোম্পানির মিটিং হোস্ট করতে পারবেন। অথবা কোন এক্সপেরিমেন্টাল প্রোজেক্ট করার জন্য এই সার্ভার ব্যবহার করতে পারবেন যার কন্ট্রোল আপনার হাতেই থাকবে। 

তো আশাকরি বুঝতে পেরেছেন ভিপিএস এর কাজ কি। তারপরেও আরও ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ভাবে বুঝার জন্য একটি রিয়েল লাইফ এক্সাম্পল নিয়ে আলোচনা করা ভালো হবে। আজকাল মানুষের ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য সবার প্রথম পছন্দ থাকে ভিপিএস সার্ভার। কারণ এখানে আলাদা পার্সোনাল কম্পিউটার পাওয়ার কারণে রুট অ্যাক্সেস সহ সার্ভার ইউজ করার সুবিধা পাওয়া যায়। 

এখানে একটি VPS সার্ভারের ৬ টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

সার্ভার হোস্টিংঃ মূলত ভিপিএস প্যাকেজ কেনার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সার্ভার হোস্ট করা। কারণ আমরা সাধারণত হোস্টিং কিনে থাকি ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য। ভিপিএস সার্ভার আমাদের ডেডিকেটেড আইপি সহ সার্ভার তৈরি করার সুযোগ দেয়।  

হাই ট্রাফিক ওয়েবসাইট চালানোঃ একটি ওয়েবসাইটে অনেক সময় ভিজিটর ট্রাফিক ওঠানামা করে। অনেক সময় কোন কন্টেন্টের জন্য ওয়েবসাইটে অনেক বেশি হিট পরার সম্ভাবনা থাকে। VPS সার্ভারে পার্সোনাল ভার্চুয়াল সার্ভার থাকার কারণে হাই ট্রাফিক হ্যান্ডেল করার জন্য মূল কনফিগারেশনের উপর তেমন একটা চাপ পরে না। যে কারণে হাই ট্রাফিক ওয়েবসাইট বা অ্যাপের জন্য ভিপিএস পারফেক্ট। যদিও ডেডিকেটেড সার্ভার সব থেকে বেস্ট অপশন কিন্তু ডেডিকেটেড সার্ভারের প্রাইস অনেক বেশি হয়। সে হিসেবে ভিপিএস অনেক ভালো এবং রিলায়েবল অপশন। 

এক্সপেরিমেন্টাল প্রজেক্ট: অনেক ধরনের এক্সপেরিমেন্টাল প্রোজেক্ট আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে পরিচালনা করতে হয়। এসকল কাজ করার জন্য ভিপিএস অনেক ভালো এবং ফ্লেক্সিবল একটি মাধ্যম। কারণ এখানে পার্সোনাল ওএস সহকারে পার্সোনাল কম্পিউটার পাওয়া যায়। যেখানে ইচ্ছেমতো এক্সপেরিমেন্ট  পরিচালনা করা যায়। 

টরেন্ট সিডিংঃ আমরা জানি টরেন্ট ফাইল সিড করার জন্য আমাদের ডেডিকেটেড আইপি লাগে। ভিপিএস সার্ভার স্মুথভাবে ডেডিকেটেড আইপি সহ পার্সোনাল পিসির সুবিধা দেয়। এ কারণে টরেন্ট ফাইল সিডিং করার জন্য ভিপিএস সার্ভার ব্যবহার করা হয়। VPS সার্ভারের সিকিউরিটি নিজে মেইটেইন করা যায় এবং আইপি হাইড করে টরেন্ট সিডিং করা যায়। 

গেমিং সার্ভার হোস্টঃ গেম খেলার সময় আমরা অনেক ধরনের ল্যাগিং এর সমস্যায় পড়ি। এছাড়া আরো অনেক সমস্যা হয়। চিন্তা করুন আপনার নিজস্ব সার্ভারে যদি গেম হোস্ট করে মাল্টিপ্লেয়ারে খেলেন তাহলে কেমন লাগবে? নির্দ্বিধায় বলা যায় অনেক ভালো একটি এক্সপেরিয়েন্স হবে। তাছাড়া আপনি আপনার নিজের তৈরি গেম আপনার পার্সোনাল ভিপিএস সার্ভারে হোস্ট করতে পারবেন। 

ব্যাকআপ রাখাঃ আমাদের বিভিন্ন সময় অনেক কিছুর ব্যাকআপ রাখতে হয়। আমরা অনেক অনলাইন ড্রাইভ ইউজ করি ফাইল স্টোর করার জন্য। কিন্তু যদি পার্সোনাল ড্রাইভ থাকে তাহলে তো অবশ্যই ভালো হয় তাইনা! তো আপনি আপনার VPS সার্ভারকে সব ধরনের ফাইলের জন্য ব্যাকআপ হিসেবে ইউজ করতে পারবেন। এবং সকল ফাইলের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই থাকবে। 

কোথায় থেকে ভিপিএস হোস্টিং কিনবেন?

বর্তমানে অনেক হোস্টিং কোম্পানি আছে যারা সবধরনের সার্ভার সেল করে থাকে। তবে সবসময় সার্ভার বিশ্বস্ত মাধ্যম থেকে কেনা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ সার্ভার সমস্যা করলে আপনার ওয়েবসাইট অফলাইন হয়ে থাকবে যা সার্ভিস বা বিজনেসের জন্য অনেক খারাপ ইফেক্ট ফেলে। 

বাংলাদেশী হোস্টিং কোম্পানীরগুলোর মধ্যে অনেক ভালো মানের কোম্পানী আছে। যেমন IT Nut Hosting এখানে লিনাক্স এবং উইন্ডোজ ভিপিএস সার্ভারের বিভিন্ন প্রাইসের প্যাকেজ পেয়ে যাবেন। আর যদি বিদেশী কোন কোম্পানি বাছাই করেন তবে অবশ্যই সেই কোম্পানী সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্স করে নিবেন। বিশেষ করে ভিপিএস সার্ভার নেওয়ার আগে আপনাকে দেখে শুনে সিধান্ত নিতে হবে।

কারণ এখানে অনেক গুলো টাকা একবারে ইনভেস্ট করতে হবে। একটি ভুল সিদ্ধান্ত এর কারণে টাকা, সময় সব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে সতর্কভাবে ফিচারগুলো যাচাই করলেই বুজতে পারবেন আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারবে কিনা। 

একটি সার্ভার যেহেতু ওয়েবসাইট লাইভ এবং কর্মক্ষম রাখে সেহেতু এই বিষয়ে কোন কিছু কনসিডার করা একদম উচিত না। কারণ এতে বিজনেসের সুনাম খারাপ হয় এবং কাস্টমার হারানোর ভয় থাকে। পুরো লেখায় VPS সার্ভার নিয়ে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি আজকের পোস্টে আপনারা ভিপিএস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। ভিপিএস সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ। 

Leave a Reply